মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের বরখাস্তের আদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার কর্তৃক বরখাস্ত হয়েছিলেন চেয়ারম্যান মুকুল।
এনিয়ে মুকুল কর্তৃক হাইকোর্টে রীট দায়ের হলে শুনানি শেষে মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এদিকে, হাইকোর্টে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ৪ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগে দায়েরকৃত ১৪৪১ নং মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করে বরখাস্তের আদেশ বহাল করেন। ৮ অক্টোবর এই আদেশে স্বাক্ষর করেন বিজ্ঞ বিচারপতি।
আপীল ডিভিশনে মামলা পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ নিয়োজিত আইনজীবী প্যানেলের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শেখ শফিক মাহমুদ পুষ্প।
তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার আপীল সূত্রে প্রকাশ, ৭ জুলাই ইমদাদুর রহমান মুকুলকে বরখাস্তের গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ৩৯৩৭ নং পিটিশন দাখিল করেন ইমদাদুর রহমান মুকুল।
২৩ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম.খসরুজ্জামান ও বিচারপতি এম. মাহমুদ হাসান তালুকদারের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ রহিত করে চেয়ারম্যানকে স্বপদে বহালের আদেশ দেন।
মুকুলের পক্ষে রিটের শুনানী করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। এরই প্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত গেজেটে স্বপদে বহাল হন ইমদাদুর রহমান মুকুল। স্বপদে বহাল হয়ে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও মিষ্টি বিতরণ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ২ মাস ১৫ দিন চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার ছিলেন তিনি।
এবার ১৫ দিনের ব্যবধানে আবারো বরখাস্ত হলেন আলোচিত চেয়ারম্যান মুকুল।
আপীল ডিভিশনে মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি শেখ শফিক মাহমুদ পুষ্প বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরখাস্ত হওয়া ৫৩ জনপ্রতিনিধির মধ্যে ২৯ জন স্বপদে বহাল হন।
এটর্নী জেনারেল অফিসের ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নিয়োজিত আইনজিবী হিসেবে সরব হই। আপীল বিভাগে পিটিশন দাখিল করি। এখন থেকে গজনাইপুর ইমদাদুর রহমান মুকুলের বরখাস্তের আদেশ বহাল থাকবে।
উল্লেখ্য, বিগত চার বছর ধরে ২২৯ জন লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০টাকা) কেজির চাল আত্মসাতের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। পরে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ও উপজেলা খাদ্য বান্ধব কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন হয়। দীর্ঘ তদন্ত ও বিস্তর নাটকীয়তা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।
চাল চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ৭ জুলাই ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়ীক বরখাস্ত সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি হয়। চেয়ারম্যান মুকুলসহ ৪ জনের বিষয়ে স্থগিতাদেশ বাতিল করেন আপীল বিভাগের বিজ্ঞ বিচারপতি।
এ আদেশের ফলে চেয়ারম্যান মুকুলের বরখাস্তের আদেশ বহাল হয়েছে। এনিয়ে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।